December 22, 2024, 3:35 pm
দৈনিক কুষ্টিয়া অনলাইন/আনন্দবাজার পত্রিকা অবলম্বনে/
নিউ টাউনের ফ্ল্যাটের সেপটিক ট্যাঙ্ক, বর্জ্য যাওয়ার পাইপলাইন থেকে মিলল মাংসের টুকরো, চুল। সিআইডির তদন্তকারীদের সন্দেহ, এ সব বাংলাদেশের নিহত সাংসদ আনোয়ারুল আজিমের হতে পারে। বিষয়টি নিশ্চিত করার জন্য মাংসের টুকরো এবং চুলের নমুনা ফরেনসিক পরীক্ষার জন্য পাঠানো হচ্ছে। সিআইডির কাছে সেপটিক ট্যাঙ্কে তল্লাশি চালানোর জন্য অনুরোধ জানিয়েছিলেন বাংলাদেশের গোয়েন্দা প্রধান হারুন অর রশিদ। সাংসদ খুনে বাংলাদেশে ধৃত তিন জন এবং পশ্চিমবঙ্গে ধৃত জ়ুবেরকে জেরা করে এমনটাই সন্দেহ হয়েছিল হারুনের। এদিকে আনারের মেয়ে মুমতারিন ফেরদৌস ডরিন জানিয়েছেন, ফ্ল্যাটের সেপটিক ট্যাংক থেকে মরদেহের খণ্ডাংশ উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানতে পেরেছি। কিন্তু খণ্ডাংশ বাবার কি না তা নিশ্চিত করেনি পুলিশ। এজন্য ডিএনএ টেস্টের স্যাম্পল দিতে কলকাতা পুলিশ ডাকলে সেখানে যাবো। তিনি বলেন, তার ভারতীয় ভিসা হয়েছে।
মঙ্গলবার নিউ টাউনের ফ্ল্যাটে বর্জ্য নিষ্কাশনের পাইপ এবং সেপটিক ট্যাঙ্কে নেমে তল্লাশি চালিয়ে মাংসের টুকরো এবং চুল উদ্ধার করা হয়েছে। এই মাংসের টুকরো বাংলাদেশের ঝিনাইদহের সাংসদ আনোয়ারুলের কি না, এখন তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। খুনের ‘কিংপিন’ তথা নিহতের বাল্যবন্ধু আখতারুজ্জামান-সহ চার জনের বিরুদ্ধে ‘লুকআউট নোটিস’ জারি করেছে সিআইডি। হারুন মঙ্গলবার সকালে জানান, সাংসদের দেহাংশ না মিললে তদন্ত থামবে না। সিআইডিকে নতুন কিছু জায়গায় তল্লাশি চালানোরও অনুরোধ করেছিলেন তিনি।
কলকাতায় এসে ঝিনাইদহের সাংসদ খুনের তদন্ত করছেন বাংলাদেশের গোয়েন্দাপ্রধান। তদন্ত সূত্রে মঙ্গলবার নিউ টাউনের একটি শপিং মলে গিয়েছিলেন তিনি। হারুন আশাবাদী, আনোয়ারুলের দেহাংশ মিলবেই। সিআইডি খোঁজ চালাচ্ছে। পাশাপাশি, তিনি সিআইডিকে নিউ টাউনের ঘটনাস্থলের পাশে যে হ্রদ রয়েছে, সেখানেও তল্লাশি চালানোর অনুরোধ করেন। এই ঘটনায় বাংলাদেশে ধৃত তিন জনকে জেরা করা হয়েছে। তাঁদের থেকে যে তথ্য মিলেছে, তার সঙ্গে এখানে এসে তদন্ত সূত্রে যা জানতে পারছেন, তা মিলে যাচ্ছে। হারুন জানান, তিন জন জেরায় জানিয়েছেন, কোন ঘরে তাঁরা গিয়েছিলেন। কোথায় খুন করা হয়েছে সাংসদকে।
খুনের তদন্তে কলকাতায় এসে রবিবার নিউ টাউনের সেই ফ্ল্যাটে গিয়েছিলেন বাংলাদেশের গোয়েন্দাপ্রধান, যেখানে হারুনকে খুন করা হয়েছে বলে অভিযোগ। সঙ্গে ছিল তাঁর নেতৃত্বাধীন তদন্তকারীদের একটি দল। পশ্চিমবঙ্গের সিআইডি আধিকারিকেরাও ছিলেন। জিহাদকেও প্রায় চার ঘণ্টা জেরা করেন হারুন। তিনি দাবি করেন, ঠান্ডা মাথায় পরিকল্পনা করে খুন করা হয়েছে আজিমকে।
সিআইডি জেনেছে, বাল্যবন্ধু আখতারুজ্জামান শাহিনের সঙ্গে সোনার ব্যবসা করতেন আজিম। ব্যবসায়িক লেনদেনের কয়েক কোটি টাকা না পাওয়া নিয়ে আজিমের উপরে শাহিনের ক্ষোভ ছিল বলে তদন্তকারীদের একাংশের অভিমত। মনে করা হচ্ছে, প্রতিহিংসার কারণেই নিখুঁত ছক কষে কলকাতায় ডেকে সাংসদকে ‘খুনের’ পরিকল্পনা করেন শাহিন। তবে এখনও বহু ধোঁয়াশা রয়েছে দু’দেশের তদন্তকারীদের মনে। সাংসদের দেহের কোনও টুকরো বা সেই টুকরো করার কাজে ব্যবহৃত ছুরি-কাঁচির হদিস মেলেনি। এই খুনে বাংলাদেশ থেকে তিন জন এবং কলকাতা থেকে এক জন গ্রেফতার হলেও আরও চার জন অভিযুক্ত শাহিন, সিয়াম, ফয়জল এবং মুস্তাফিজুর এখনও অধরা। তাঁদের খোঁজ পেতে ইন্টারপোলের সাহায্য নিতে পারে রাজ্য গোয়েন্দা পুলিশ। তদন্তকারীদের ধারণা, শাহিন আমেরিকায় এবং সিয়াম নেপালে পালিয়েছেন। বাকি দু’জন বাংলাদেশে থাকতে পারেন।
বাংলাদেশের গোয়েন্দাপ্রধান দাবি করেন, সে দেশে আজিমকে খুন করার জন্য দু’বার পরিকল্পনা করেও তা রূপায়ণ করতে পারেননি চক্রীরা। এর পরেই তাঁরা আনোয়ারুলকে কলকাতায় ডেকে নিয়ে গিয়ে খুনের চক্রান্ত করেন। হারুনের দাবি, সাংসদকে দিন দুয়েক আটকে রেখে মুক্তিপণ আদায়ের পরিকল্পনাও ছিল। কিন্তু বেশি পরিমাণে চেতনানাশক প্রয়োগের ফলে তিনি ‘অর্ধমৃত’ হয়ে পড়েন। তখন তাঁকে মেরে ফেলা হয়। এ রাজ্যের তদন্তকারীরা যদিও বলছেন, চেতনানাশক বা ক্লোরোফর্ম প্রয়োগের বিষয়টি বাংলাদেশ পুলিশ তাদের আগে বলেনি।
‘সুপারি কিলার’ শিমুল ভুঁইয়াকে খুনের জন্য শাহিন নিয়োগ করেন বলে তদন্তে উঠে এসেছে। এই শিমুলই আমানুল্লা আমান নামে জাল পাসপোর্ট নিয়ে কলকাতায় এসে ঘাঁটি গেড়েছিলেন। শিমুলের আবার বহুমাত্রিক পরিচয়। তিনি মাওবাদী রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। সেখান থেকে কালক্রমে ‘খুলনার ত্রাস’ এবং ‘সুপারি কিলার’-এ পরিণত হন বলে পুলিশের দাবি। শিমুল বাংলাদেশে একাধিক খুনের মামলায় অভিযুক্ত। তবে ১০ বছরেরও বেশি সময় তাঁর হদিস ছিল না। ২০১৯ নাগাদ নিজের নাম বদলে তিনি আমানুল্লা নামে পাসপোর্ট তৈরি করেন। গোয়েন্দারা জানতে পেরেছেন, শিমুলের এক আত্মীয় বাংলাদেশে ‘প্রভাবশালী’ সরকারি অফিসার। সরকারি যোগসাজশ কাজে লাগিয়েই তিনি ওই ভুয়ো পাসপোর্ট তৈরি করান বলে তদন্তকারীদের সন্দেহ। ওই পাসপোর্ট নিয়েই সাংসদ খুনের দু’সপ্তাহ আগে এ রাজ্যে ঢোকেন শিমুল ওরফে আমানুল্লা। খুনের পরে ১৫ মে তিনি বাংলাদেশে ফিরে যান। পরে এ রাজ্যের তদন্তকারীদের তথ্যের ভিত্তিতে বাংলাদেশ পুলিশ তাঁকে গ্রেফতার করে। তখনই বোঝা যায় আমানুল্লা এবং শিমুল আদতে একই ব্যক্তি।
Leave a Reply